ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৬/১১/২০২৪ ৭:৫৮ এএম

চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের রেললাইন প্রকল্পের কাজের শেষ পর্যায়ে এসে নানা ত্রুটি–বিচ্যুতি ধরা পড়ছে। দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আলোচিত এই মেগা প্রকল্পের কাজ নিয়ে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এই প্রকল্পের কাজে একাধিক ত্রুটি ধরা পড়ার কারণে এ নিয়ে এখন সমালোচনা শুরু হয়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে রাজধানী ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর সারা দেশের মানুষের কাছে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে এই রেলপথ নির্মাণ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

দোহাজারী–সাতকানিয়া–লোহাগাড়ার পর চুনতি–হারবাং–ডুলাহাজরা–অভয়ারণ্য ভেদ করে চকরিয়া–রামুর মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া এই রেলপথের বিভিন্ন স্থানে বর্ষায় পাহাড় ধসে রেলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া; রেলপথে হাতির পাল চলে আসা এবং দুর্ঘটনায় পতিত হওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে রেলপথ পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এই কারণে সদ্য নির্মিত এ মেগা প্রকল্পের সমীক্ষাসহ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই নিয়ে রেল অঙ্গনসহ দেশব্যাপী শুরু হয়েছে সমালোচনা। এরই মাঝে গতকাল রেলপথটি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ। গতকাল প্রথম দিনে দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেনে করে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি আজাদীকে জানান। তিনি বলেন, বুধবার কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন পরিদর্শন করব।

গতকাল দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শন শেষে ফরিদ আহমেদ আজাদীকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আজকে (গতকাল) ট্র্যাকের কাজ পরিদর্শন করেছি। সিগন্যালিং সিস্টেম ও ইলেক্ট্রিক্যাল লেভেল ক্রসিংগুলো দেখলাম। দোহাজারীর পর যেসব স্থানে বন্যার পানিতে রেলপথ ডুবে যায় সেখানে যেসব কালভার্ট করা হয়েছে সেগুলো দেখলাম। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার পর তারা আরো ৪টি কালভার্ট নতুন করে করেছেন বলে জানিয়েছেন। চুনতির থেকে হারবাং অভয়ারণ্যে বর্ষায় পাহাড় ধসে রেললাইন বন্ধ যাওয়ার বিষয়টি দেখলাম। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন এই প্রকল্পের বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাহাড়ের উভয় পাশে লতা–ঘাস ও গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা এগুলো লাগানো শুরু করেছেন। এছাড়া ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাচ্চা হাতি মারা যাওয়ার পর উভয় পাশ দিয়ে যাতে হাতি রেললাইনে নামতে না পারে এজন্য উঁচু করে ওয়াল নির্মাণ করছেন। হাতি নামার পথটি ব্লক করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, রেলপথে লেভেল ক্রসিং, পয়েন্ট ক্রসিং, পাহাড় ধস, নিরাপত্তাসহ কোনো ক্রটি থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেব। এসব বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নেব। কারণ এই রেলপথ নিয়ে সারা দেশের মানুষের আগ্রহ বেশি। এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় কিছুটা ক্রটি রয়েছে বলে মনে হলেও কাজ শেষ হলে সেগুলো আর থাকবে না।

দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের সবচেয়ে বড় ক্রটি দেখা গেছে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশন নির্মাণে। বর্ষায় স্টেশনের উপর থেকে পানি চুঁইয়ে স্টেশনের ভেতরে পড়ার বিষয়ে ফরিদ আহমেদ বলেন, বুধবার কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন পরিদর্শন করব।

রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঁচ তারকা হোটেল সুবিধা নিয়ে কক্সবাজারে নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশন। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে তৈরি স্টেশন ভবনটির কাজ শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে কার্যক্রম চলছে স্বল্প পরিসরে। এর মধ্যে সামনে এসেছে নির্মাণকাজের নানা ক্রটি। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি ঢুকে স্টেশন ভবনের ভেতর। ড্রেনেজের পানি উপচে প্ল্লাবিত হয় প্ল্যাটফর্ম। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পরিচালন কার্যক্রম। ব্যয়বহুল আইকনিক স্টেশন ভবনটির নির্মাণকাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (সিসিইসিসি) সঙ্গে যৌথভাবে স্টেশন ভবনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার একটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে রামু থেকে টেকনাফের ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ বাদ যাওয়ায় দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে ...

সৈকতে থেকে ২০ রোহিঙ্গা আটক

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ২০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছেন স্থানীয়রা। বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার পারকি ...